বুফে খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা

বুফে খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা

একাধিক প্লেটের ওজনের নিচে একটি টেবিল কাঁপতে দেখা অস্বাভাবিক নয়, প্রতিটি ভিন্ন খাবারে ভরা। খাদ্যের এই প্রাচুর্য আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দ কেন্দ্রগুলিকে ট্রিগার করে, যা আমাদের সন্তুষ্টি এবং সুখের অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। লোকেরা বুফে পছন্দ করার আরেকটি কারণ হল তারা যে মূল্য দেয় তা বুঝে নেয়।

তখন সদ্য নির্মিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন হলে আমার প্রথম বুফে খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা শেষ হয়েছিল ঢাকা ক্লাবের শেষ (আমার) পার্টিতে। এরপর আর ঐমুখো হইনি। কেন হয়নি তা পরে বলছি।


banner4
বুফে হল একটি স্ব-পরিষেবা শৈলী যেখানে অতিথিরা নিজেদের পরিবেশন করেন। এই স্টাইলটি ন্যূনতম সাহায্যে বিপুল সংখ্যক লোককে খাওয়ানোর জন্য একটি দুর্দান্ত পদ্ধতি। রাতের খাবারের বুফে হল আপনার অতিথিদের যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে ব্যবহারিক এবং সুবিধাজনক উপায়। বুফে সার্ভিসের অনেক বৈচিত্র রয়েছে।

এই সেই হল। নতুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (BICC) প্রথমবারে স্যার সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে ছিল বিচিত্র আয়োজন। হোস্টেলের মত কিংবা জেলখানার কয়েদিদের মত প্লেট হাতে সারি বেঁধে খাবার আনতে হবে! এতো কখনোই ভাবিনি। একজন প্লেটে তুলে আদর করে খাওয়াবে এমনটা ভাবতাম।

না বুঝে যাই দেখি তাই প্লেটে তুলে নিয়েছি। এত বেশি খাবার প্লেটে তুললাম যে সেটা নিয়ে আমার দুর্বল হাত দুটো দিয়ে প্লেট ধরে রাখায় হাঁটতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে একটি টেবিল খুঁজে বসলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি স্যার বেশ দূরে, বুড়োর প্লেটে অল্প কিছু খাবার। সে তুলনায় আমি হিমালয় সদৃশ প্লেট নিয়ে বসেছি।

খেতে গিয়ে বুঝলাম পাতলা খাসির মাংস ভেবে যেটা খাচ্ছি তা হল মাশরুম। ওরে বাবা এই জিনিস আগে কখনো খাইনি। অগত্যা রূপচাঁদা খেলাম। ভাত, খিচুড়ি, বিরিয়ানী , পোলাও সব নিয়েছি। তন্দুর আর গ্রীল চিকেন আমার বেশ প্রিয়, সেসব বাদ যাবে কেন? স্যারকে দেখলাম আবার প্লেটে করে কিছু ফ্রুট সালাদ এনে খাচ্ছেন। এমনটা ত জানতাম না।

একবারে যা নেয়ার নিতে হবে ভেবেছিলাম। এখন আমারও ত ইচ্ছে করছে কিছু ফ্রুট সালাদ খেতে! কিন্তু প্লেটের এই হিমালয় সদৃশ খাবার নষ্ট করব! মা ত খাবার নষ্ট করতে নিষেধ করতেন। অগত্যা ঐ প্লেট ঘেঁটে কাকের মত এটা সেটা খাচ্ছি। তারপর স্যারকে দেখলাম না সামনে, পেছনে ঘুরতে দেখি বুড়ো নতুন প্লেটে দই আর সন্দেশ নিয়ে খেতে খেতে আমার পাশে এসে বসল।

কিছুক্ষণ পর একবাটি প্রন স্যুপ নিয়ে আসলেন আর তা থেকে বড় চিংড়িগুলো তুলে যত্ন করে আমার পাতে দিয়ে তিনি শুধু স্যুপ খেলেন ( বুড়োর কোলেস্টারোল কমানোর ধান্ধা বুঝতে পারছি )। তিনি আমাকে বিফ খেতে দেখে বললেন, দাঁতের জোর নেই তাই ওসব ভুলে গেছেন।

মাংস তন্দুর আর কাবাব নিয়ে যুদ্ধে আমার দৈন্যদশা খুব উপভোগ করছেন তিনি বেশ বুঝতে পারছি।

এরপর যতবার বুফে খেতে গিয়েছি বেশ সাবধানে খাওয়া বেছে নিতাম। কিন্তু লাভ হয়নি। পেটে সহ্য হতোনা। ঘরে বসে লুংগি পরে চেয়ারে পা তুলে সরিষার তেলে বৌয়ের হাতের দেশী আলুর ভর্তা সহযোগে ডালভাত ই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বুফে মনে হত।

কিন্তু বুফে খাওয়ারও কিছু মূল নীতি আছে। যেমন, ভাল খাবারগুলো শেষের দিকেই থাকে কিংবা খাওয়ার আগে এপেটাইজার খাওয়া।



মন্তব্যসমূহ